সহজেই ঘুরে আসুন টাংগুর হাঁওর



সত্যিই খুব সুন্দর জায়গা টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, বারেক টিলা, টেকেরঘাট (লাকমাছড়া, নীলাদ্রী লেক, পরিত্যক্ত চুনাপাথর প্রকল্প)। আমরা ৫ ভাই বোন ঘুরে আসলাম গত ২৬ তারিখে। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন পরিবার নিয়ে স্বল্প খরচে। আমাদের ট্যুর প্ল্যান এরকম ছিলঃ
রাত ১০.৩০- ঢাকা-সুনামগাঞ্জ (শ্যামলী) জনপ্রতি ৫৫০
টাংগুর হাঁওর

দিন ১ঃ

সকাল ৭.০০-সুনামগাঞ্জ-তাহিরপুর (সিএনজি) জন প্রতি ১০০ টাকা করে ভাড়া। আপনি চাইলে বাসে আব্দুস জহুর সেতুর কাছে নেমে সি এন জি নিতে পারেন অথবা বাস কাউন্টারে নেমে অটোতে করেও সেতুর কাসে আসতে পারেন। একটা অটো গাড়ি ৬০ টাকা নিবে।
সকাল ৮.৩০- ডাক বাংলোতে প্রবেশ (আগেই কথা বলে নিবেন। যোগাযোগের ঠিকানা নিচে দেওয়া আছে) ২ রুমে আমরা ৫ জন ছিলাম পরদিন দুপুর ২ টা পর্যন্ত। ৬০০ টাকা নিয়েছে মোট। সাথে কিছু বকসিস চাইতে পারে।
সকাল ৯.১৫- সকালের নাস্তা।
এরপর তাহিরপুর-মিয়ার চর (সি এন জি) ৩০০ টাকা রিজার্ভ। ১ ঘণ্টা লাগে যেতে।
ওখান থেকে যাদুকাটা নদী অতিক্রম (নৌকা) জনপ্রতি ৫ টাকা করে।
নদী পার হয়ে অটো রিজার্ভ নিবেন শিমুল বাগান পর্যন্ত। প্রতি অটো ৩০০ টাকা করে।
৩০-৪০ মিনিট লাগবে। তারপর হেটে নদীর চর পার হয়ে রাস্তায় উঠে ডান দিকে সোজা হাটবেন। চাইলে রাস্তা থেকে গাইড নিতে পারেন ২০০ টাকা দিলেই খুশি হবে। হেটে সোজা বারিক টিলায় উঠে যাবেন। এক দিক দিয়ে উঠে আরেক দিক দিয়ে নেমে যাবেন। নেমে অটোতে উঠবেন (যদি বাইক না চড়তে চান)। অটোতে উথার সময় গাইড ছেড়ে দিবেন।
ওই অটোতে করে টেকেরঘাট (ডাম্পের বাজার-পুরাতন বাজার) যাবেন। যাওয়ার পথে বড়ছড়া বাজারে দুপুরের খাবার খাবেন। তারপর টেকেরঘাটের কাছাকাছি গেলেই দেখেবন এক পাশে সবুজ টিলা, আরেক পাশে নীল রং এর লেক (নীলাদ্রী লেক)। ওখানে থেমে ঘুরে ছবি তুলবেন। তবে মনে রাখবেন কোনভাবেই যেন বিকাল ৫.০০ টার বেশি না বাজে ঘোরা শেষ করতে। এই জায়গা আবারো আ্সা হবে পরদিন সকালে। এরপর ঘাটে নেমে ৫ টাকা জনপ্রতি করে নৌকা দিয়ে পার হয়ে নতুন ঘাটে নামবেন। ওখানে নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দিবে তাহিরপুর যাওয়ার লাইনের নৌকা কোথা থেকে ছাড়ে। ওখানে গিয়ে জনপ্রতি ৪০ টাকা করে লাইনের নৌকায় উঠবেন। ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট লাগে তাহিরপুর যেতে। দেরী করে ফেললে লাইনের নৌকা আর পাবেন না। তখন নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। (আমাদের দেরী হয়েছিল, ফলে ৬০০ টাকায় নৌকা রিজার্ভ নিতে হয়েছিল)। এজন্যই বিকাল ৫ টার মধ্যে ঘোরা শেষ করতে বলেছি। আমরা তাহিরপুর থেকে দুপুর ১২ টায় বের হয়ে ঘুরে ৬ টায় এসে তাহিরপুরের নৌকা ভাড়া করেছিলাম। তাহিরপুর থেকে সকাল ১০.৩০ টার আগেই বের হলে সমস্যা হবে না। খুব সহজেই ঘোরা যাবে। রাতে হোটেল আফরোজে খাবেন।

দিন ২ঃ

শুরুতেই বলে রাখি ২য় দিনে আমরা একটু ভিন্ন সময়ের প্ল্যান করেছিলাম যা সা্ধারনত দেখা যায় না।
আমরা ভোর ৪.৪৫ এ নৌকায় উঠেছিলাম। আগে থেকেই মাঝি ফজলু ভাইকে (নাম্বার নিচে দেওয়া আছে) বলে রেখেছিলাম সবকিছু। উনি খুব খুব ভাল মানুষ। তিনি থাকলে আর কোন সমস্যা নাই। উনি ভোর ৪.৩০ টায় আমাদের ডাক বাংলো থেকে নিয়ে নৌকায় নিয়ে গেছেন। আগের দিন রাতে ওনার সাথে দেখা করে সব ঠিক করে নিবেন।
নৌকাতে উঠে যা দেখলাম, তা বলে বুঝানো যাবে না। হাওরে সূর্যোদয়ের দৃশ্য বর্ণনাতীত। সকাল ৬.৩০ টায় টেকেরঘাট পৌছে গেলাম। নেমে আবার নীলাদ্রী, চুনাপাথর প্রকল্প ঘুরে নিবেন। তারপর মাঝির সাথে যাবেন লাকমাছড়া দেখেতে। সিলেটের বিছানাকান্দির মত দেখতে জায়গাটা। দেখে ফিরে এসে নাস্তা করে নিবেন।
তারপর শুরু হবে টাঙ্গুয়ারের উদ্দেশ্য যাত্রা। ভ্রমনটা সত্যিই উপভোগ্য। ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে চলে যাবেন ওয়াচ টাওয়ারে। ওখানে যতক্ষন খুশি সময় কাটান, পানিতে নামুন, গোসল করুন, ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বন ঘুরে দেখুন, রাতারগুলের স্বাদ পাবেন। যতক্ষন খুশি ঘুরে তাহিরপুর চলে আসুন। আসার সময় লাগবে ১ ঘন্টা।
নৌকা ভাড়া নিল ২৭০০ টাকা। আর বকসিস দিলাম ৬০০ টাকা। ওনার বিভিন্ন ধরনের নৌকা আছে। চাইলে আপনি ওনার নৌকায় থাকতে পারেন। উনি ভাল রান্নাও পারেন। ২ দিনের জন্য নিলে কথা বলে দাম ঠিক করে নিবেন।
টাংগুর হাঁওর
তারপর তাহিরপুর এসে, ডাক বাংলোতে ফ্রেস হয়ে আফরোজে দুপুরের খাবার খাবেন। খেয়ে ব্যাগ নিয়ে সি এন জি তে উঠবেন। সি এন জি কে বলবেন সুনামগঞ্জ গিয়ে কবি হাসন রাজার বাড়ি ঘুরিয়ে বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে নিতে। সর্বোচ্চ ৬৫০ টানা নিবে সব মিলিয়ে। বিকেলে ঢাকার বাস পাবেন না। কেউ যদি চান শহর ঘুরে, সুরমা নদীতে রিভার ভিঊ ঘুরে রাতের বাসে ফিরতে পারেন অথবা আমাদের মত কাজ করতে পারেন। আমরা কবি হাসন রাজার বাড়ি ঘুরে, সুরমা নদীর পার দিয়ে এসে সিলেট-সুনামগঞ্জ বিরতিহীন বাস কাউন্টারে এসে সি এন জি থেকে নেমেছি। ওইখান থেকে ৯০ টাকা জনপ্রতি বাসের টিকেট কেটে সিলেট এসেছিলাম। বাস তেমন দাঁড়ায় নাই সিটিং সার্ভিস। ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটে সিলেটের কুমারগাও বাস স্টেশনে নেমে গেছি। ওইখান থেকে সি এন জি নিয়ে রেল স্টেশনে গিয়েছিলাম (অনলাইনে টিকেট কাটা ছিল, টিকেট প্রিন্ট করেছি)। তারপর পানসী রেস্টুরেন্টে আনলিমিটেড খাওয়া। পানসীতে ফ্রেস হয়ার ভাল ব্যবস্থা আছে। ২য় তলায় রাজ পানসীতে চলে যাবেন। খুবই ভাল খাবার, দামও কম। ভীড় থাকে অনেক, একটু সময় লাগবে জায়গা পেতে। খেয়ে এসে ট্রেনে উঠে গেলাম। রাত ১০ টায় উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ল, ভোর ৫.৩০ টায় কমলাপুর নামিয়ে দিল। আপনার চাইলে বাসেও আসতে পারেন।
আমাদের খরচ হয়েছিলঃ ৩৮০০ টাকা জনপ্রতি (যেখানে লাইফ জ্যাকেট ছিল ৬০০ টাকা করে)। লাইফ জ্যাকেট অবশ্যই নিয়ে যাবেন, সাতার জানেন বা না জানেন।
প্রয়োজনীয় যোগাযোগঃ
কাইয়ুম (ডাক বাংলো, তাহিরপুর)> ০১৭৩৬৪৪৭৪৭৬
ফজলু ভাই (মাঝি)> ০১৭১৯৬৫৯৪৪৫
ঘুরে আসুন ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।


সংগৃহীত- 
Tahasin Ahmed Fahim ভাই
Travelers OF Bangladesh.


EmoticonEmoticon