Tour details of Sundarbans-সুন্দরবন টুরের বিস্তারিত ঃ




ইন্টারনেটে খু্ব বেশি তথ্য না থাকায়, অনেকেই সাহস করেন না সুন্দরবনে টুর আয়োজনের। অনেকে আবার ভাবেন, অনেক বড় টিম ছাড়া সুন্দরবন যাওয়াই যাবেনা। প্রথম কথাটা কিছুটা যৌক্তিক বলে এই লেখা, তবে খুব বড় টিম লাগে সেটিও এখন আর যৌক্তিক নয়। এটা ঠিক যে দেশের অন্যান্য যে কোন ভ্রমন স্পটে একা একা বা দুই একজন মিলে যাওয়া গেলেও সুন্দরবন তার ব্যাতিক্রম। লঞ্চ ও তেলের খরচ পোশাতে যেতে হয় দল বেধে। কিন্তু তথ্য বা ধারনা না থাকায় অনেকই এ ভ্রমন কে কঠিন মনে করে আগ্রহ হারায় বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ ম্যানগ্রোভ বন ভ্রমনের প্রতি। সবার অবগতির জন্য সুন্দরবন বিষয়ে কিছু তথ্য দেয়ার চেস্টা করছি।
সুন্দরবনে সাধারনত তিনি ধরনের টুর হয়:
#শর্ট টুর: করমজল
এটা সুন্দরবনের প্রথম স্পট। মংলা থেকে চার ঘন্টায় ঘুরে আসা যায় অনায়াসেই, কোন পারমিসনের প্রয়োজন হয়না, ২৩ টাকার প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করলেই যথেস্ট। এখানে রয়েছে বনে হাটার জন্য একটি ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ার, সুন্দরবনের অন্য স্পটগুলোতে হরিণ কুমির বা বানর দেখতে পান বা না পান করমজলে দেখতে পাবেন শিওর। কারন তাদেরকে বেধে রাখা হয়েছে। এ দৃশ্য অবশ্য যে কোন চিড়িয়াখানাতেও দেখা যায়।
#মাঝারি টুর: হারবাড়িয়া
আমার দেখা সু্ন্দরবনের সবচেয়ে গোছানো ও সুন্দর স্পট এই হারবাড়িয়া। চিড়িয়াখানা ছাড়া করমজলের সব গুনই আছে হারবাড়িয়ায়। এখানে পাবেন আরেকটু গহীন বনের অনুভুতি। এই স্পটটি সুন্দরবনের আরেকটু ভেতরে হওয়ায় ঘুরে আসতে একদিন পুরো লেগে যায়, অনেকে নৌকাতে রাতেও থাকে। বন বিভাগের পারমিশন ছাড়া ট্রেইলে হাটা যাবেনা। পাশ পারমিশন হয়ে গেলে আপনার সাথে দেয়া হবে একজন গান ম্যান। যেহেতু গান ম্যান সাথে যায়, তাই বুঝতেই পারছেন এটা কোন খেলনা বন নয়, হালুমের মোটামুটি কাছাকাছিই আছেন আপনি। এই স্পটে প্রায়ই দেখা মেলে বাঘের কাঁচা পায়ের ছাপ। তাই চোখ কান খোলা রাখুন!
নাব্বতা সংকটের কারনে মোংলা পোর্টে এখন আর বড় জাহাজ খুব একটা আসেনা। সব আনলোড হয় এই হারবারিয়ার মাঝ নদীতেই। তাই সেখানে গেলে আপনার দেখা মিলবে বিশাল দেহি সামুদ্রিক জাহাজ, যা আমাদের দেশী সাধারণ কার্গোগুলোর ২০-৫০ টার সমানও হয়)
#লং টুর: কটকা- কচিখালী-হারবাড়িয়া-করমজল
সুন্দরবনের পরিপুর্ন স্বাধ যদি কেউ পেতে চায় তাহলে তাকে এই টুরে যেতেই হবে। আগের স্পটগুলোও কভার করা হয় এই টুরে, সাথে যোগ হয় গহীন বনে প্রবেশ ও বাঘের রাস্তা ধরে হাটার সুযোগ।এই টুরে পুরো তিন দিন লেগে যায়। লঞ্চ নিয়ে চলে যাওয়া হয় সুন্দরবনের একেবারে শেষ মাথায়। গহীন বনের যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বঙ্গপসাগর, সে দৃশ্য চোখে না দেথলে বলে বোঝানো যাবে না। সাধারণত বাঘ দেথা না গেলেও খোলা মাঠে হরিন দেখতে কটকায় খুব একটা ভাগ্য লাগেলা।এর পাশেই কচিখালী স্পট, সেখানেই অবস্থান কচিখালী বিচের। এই টুরে নৌকায় করে ঘুরা হয় ছোট খালে। বড়শি দিয়ে ধরা যায় মাছ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাঘের পায়ের ছাপ। তিন দিন খাওয়া দাওয়া সহ সব কর্মকান্ডই হয় লঞ্চে।
(খরচ নির্ভর করে সংখ্যা ও সময়ের উপরে তাই এ বিষয়ে কোন তথ্য লাগলে ইনবক্সে করতে পারেন। সময় করে সবাইকেই রিপ্লে দেয়ার চেস্টা করবো। বলতে পারবো তখন কেমন খরচ চলছে।)
ডিসেম্বর জানুয়ারী এই দুই মাস নিয়মিতই টুর অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। চাইলে তাদের প্যাকেজে অন্যান্যদের সাথে মিলে টুরে যাওয়া সম্ভব। আর নিজেরা যেতে চাইলে ছোট দুই একটি গ্রুপ মিলেও টুরে যাওয়া যেতে পারে। অথাবা নিজেরা ইভেন্ট করে কয়েকজন মিলে করা যেতে পারে ভ্রমন গ্রুপ। অনেকেরই হয়ত ধারনা ৪০/৫০ জনের কমে সুন্দরবন যাওয়া যায়না, কিন্তু মজার ব্যাপার হল মাত্র ৮-১০ জনেই হতে পারে একটি গ্রুপ, আর এর চেয়ে যত বেশিই হোক সমস্যা নেই। আর নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ পড়ে সাভাবিকের তুলনায় কম। তবে চাইলে
খুলনা ও মংলা দুই যায়গা থেকেই জাহাজে ওঠা যায়, কিন্তু খুলনার জাহাজগুলো মোংলা হয়েই যেতে হয়, তাই মোংলা থেকে ওঠাই বেটার।
আর ঢাকা থেকে মংলার যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালই বলা চলে। সায়দাবাদ থেকে সরাসরি বাস আছে, একেবারে ঘাটে নামিয়ে দেবে। বাস থেকে নেমে ৫০ কদম এগুলোই জাহাজ। তবে মোংলার সবই সেমি চেয়ার কোচ, দুই একজন লোক দাড়িয়েও নিতে পারে। এসিতে যেতে হলে বা ট্রেনে ভ্রমন করতে হলে যেতে হবে খুলনা। তবে সময় লাগবে বেশি। সেখান থেকেও মোংলা আসা যায় অন্য গাড়িতে। আর খুলানা থেকেও ওঠা যায় সুন্দরবনের লঞ্চে।

ট্রান্সপোর্ট ও সম্ভাব্য খরচ

সুন্দরবনে যে শুধু বেশি খরচেই ঘুরতে হয় তা নয়, চাইলে কিছুটা কম খরচেও ঘুরতে পারবেন আপনি। .সুন্দরবনে যে তিন রকমের টুর হয় সেটা নিয়ে তো আগেই লিখেছি, আজ লিখছি তিন দিনের 'লং টুরের' খরচ ও ট্রন্সপোর্ট নিয়ে। সুন্দরবন যেতে হলে খুলনা বা মংলা এর যে কোন একটি যায়গা থেকে আপনাকে উঠতে হবে লঞ্চে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন অপারেটরের বিভিন্ন মাপ ও মানের লঞ্চ। #খুলনা থেকে সাধারনত ৩০ থেকে ৭০ বেডের লঞ্চ পাওয়া যায়। আপনার টিমের আকার যদি ছোট হয় (দুই চার জন) সেগুলোতে অন্যদের সাথে কম্বাইন্ড করে সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারেন। সাধারনত প্রতি শুক্র-রবি অথবা সোম/মঙ্গল-বুধ/বৃহঃ খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। এছাড়া প্রতিদিনই প্যাকেজ থাকার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু নিশ্চিত নয়। আর নিজেদের লোক সংখ্যা যদি একটি লঞ্চের সমান হয় তাহলে প্যাকেজের ভিতরেই নিজেরাই একটি লঞ্চ নিতে পারবেন।#মংলা থেকেও এই প্যাকেজগুলো করা হয়, কিন্তু এক দুই জনের জন্য নিয়মিত কোন প্যাকেজ নেই। অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য খুলনার লঞ্চ গুলোই মোংলায় এনে সেখান থেকে প্যাকেজ করে থাকে।মোংলা থেকে নতুন একটি সার্ভিস চালু হয়েছে। ১০ থেকে ২০ জনের গ্রুপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘন্টা কম লাগে। খরচ: সুন্দরবনের প্যাকেজগুলোতে জাহাজে ওঠার পর থেকে তিনদিনের টুর শেষে আবার ঘাটে ফেরা পর্যন্ত লঞ্চভাড়া, ফুয়েল, খাবার, নাস্তা, প্রত্যেকের সরকারী পাশ, রেভিনিউ, গাইড, গানম্যান, বনে ঘুরার ছোট নৌকা সহ অন্যান্য সব খরচ ইনক্লুড থাকে। অবশ্য পকেটে হিউজ পাত্তি নিয়া গেলেও সেখানে খরচ করার কোন যায়গা নাই! অনেকে ঢাকা থেকেও প্যাকেজ করে। এখানে খুলনা বা মংলা থেকে লম্ভাব্য খরচ উল্লেখ করা হল। #খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি টুরে সাধারনত খরচ পরে ৬০০০-৮০০০ টাকা।#বেশি ভালো যেতে চাইলে এর উপরে পারহেড ১৯,০০০ টাকা পর্যন্তও প্যাকেজ আছে।#আর সুন্দরবন টুরের খরচ কমানোর যে চেস্টা করছিলাম। সেই মোতাবেক স্টুডেন্টদের জন্য সুখবর হল এই যে ৩৫ থেকে ৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমন সম্ভব। তবে ন্যাশনাল হলিডে গুলোতে খরচের কোন লিমিট নেই। আর পরাপর দুইদিন যদি ছুটি পরে তাহলেতো কোন কথাই নেই। খরচ আকাশও ছুতে পারে। আর এডভান্স দিয়ে এক দেড় মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযাই কঠিন। অনেকে জাহাজ ভাড়া নিয়ে নিজেরাই আয়োজন করতে চায়, হ্যা সুন্দরবনে নিজেরাও আয়োজন করা সম্ভব, কিন্তু প্যারা মহদয় আপনাকে এতটাই অতিষ্ঠ করিতে পারে যে, আপনার টুরের আনন্দ মাটি না হয়ে কাঁদায় পরিনত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি!
ঢাকা থেকে খুলনা বা মংলায় যাতায়াত: #খুলনা কিভাবে যাবেন:ঢাকার গাবতলী/কল্যানপুর/আব্দুল্লাহপুর থেকে আরিচা ফেরি হয়ে খুলনার নিয়মিত বাস আছে। নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ আর এসি ১৩০০।বাস থেকে নেমে রিক্সা বা অটোতে করে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট।আর ট্রেনে করে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে আর কোন গাড়ী নিতে হবে না। কারন স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো।#মংলা যাওয়ার পদ্ধতি:সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌছায়। আর ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০।এ ছাড়াও গাজীপুর থেকে মংলা যায় গ্রামীন পরিবহনের একটি গাড়ী।
কিছু পরামর্শ:সুন্দরবন টুরের দুটি উপভোগের বিষয় আছে, প্রথমটি ন্যাচার আর দ্বিতীয়টি ফুড। তাই অপারেটরের সাথে রেট ঠিক করার আগে খুব ক্লিয়ারলী কথা বলুন, সে কি দেখাবে, আর কি খাওয়াবে। কথা পাকা হয়ে গেলে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করুন। এক ভ্যাসেলের কথা বলে আরেক ভ্যাসেল দিয়ে দেয়ার অভিযোগ নিয়মিত। তাই চুক্তিতে জাহাজের ছবি সংযোজিত থাকলে আরো ভালো। জাহাজের কাগজ ঠিক আছে কিনা পারলে সেটাও নিশ্চিত হয়ে নিন। গত পরশু এ বিষয়ের একটি পোস্ট খুবই মারাত্নক ছিলো।এ ছাড়াও আরো কোন তথ্যের দরকার হলে ইনবক্স করতে পারেন। ফ্রি সময়ে এ্যানসার দেয়ার চেস্টা করবো। আর খুলনা বা মোংলায় যে কোন ধরনের সমস্যার জন্য যোগাযোগ কইরেন, স্থানীয় হিসেবে যতটুকু পারি সহযোগীতা করবো ইনসাল্লাহ।

(আমার বাড়ি মোংলাতে, ঐ দিকের থাকা-খাওয়ার নিরাপত্তা বা অন্য যে কোন সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন। যে কোন তথ্য লাগলেও বলতে পারেন বিনা সংকচে। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হেল্প করবো।

Courtesy : REDWAN KHAN





EmoticonEmoticon